দিক থিয়েটার

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় , সিলেট

১৯৯৯ সালের ১৮ই আগস্ট শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে দিক নাট্য সংঘ নামে একটি নতুন সংগঠন। এই যাত্রা শুরুর অনেক আগে থেকেই ক্যাম্পাসেরই কিছু সমমনা তরুণ নতুন ভাবে কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। শাবিপ্রবির মতো একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে প্রথম বারের মতো সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হয় এবং নতুন এই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সর্বদা একটি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় থাকতে হতো, সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলতে অনেক বিষয়ই বিবেচনায় নিতে হয়েছিল।এই থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সংগঠন প্রতিষ্ঠার মূল ধারনা বিকাশ লাভ করে তা হল একাডেমিক ভাবে অর্জিত জ্ঞানের কিছু অংশ বাস্তবে প্রয়োগের এমন একটি ক্ষেত্র তৈরি করা যাতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং মননশীলতার চর্চা সমৃদ্ধ হয়।এতে করে সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্ত বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা সহ অন্যান্য নৈতিক ও শৈল্পিক বিষয়াদির বিস্তার ঘটানো সম্ভব হবে। তৎকালীন শেষ বর্ষের ছাত্র জনাব সুলতান মাহমুদ বাবুর নেতৃত্বে একটি আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে দিক নাট্য সংগঠনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ার পর জনাব সেলিম আহমেদ কে সভাপতি ও জনাব মনিরুল ইসলাম কবির কে সাধারণ সম্পাদক করে দিকের প্রথম কমিটি গঠিত হয়।শুরুর দিকে বেশ খানিকটা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দিক তার পরিকল্পনা মতো কাজ শুরু করে এবং প্রথম প্রযোজনা হিসেবে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী জনপ্রিয় নাটক “আদাব” মঞ্চে নিয়ে আসার মাধ্যমে নিজের আগমনী বার্তা দেয়।এর কিছুদিন পর নামকরণ বিরোধী আন্দোলন এবং আরো কিছু পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে পাশকাটিয়ে দিক কে মঞ্চে আসতে একটু সময় নিতে হয়। পরবর্তীতে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সদস্যদের একটি বড় অংশের অধ্যয়ন সমাপ্তির কারনে কিছুটা সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়তে হয়। তখন মৌলবাদ ও ফতোয়া বিরোধী নাটক ” “শালিস” মঞ্চায়ন করতে গিয়ে দিক নাট্য সংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের বিরোধিতার সম্মুখীন হয় এবং নাটক মাঞ্চায়নের জন্য পূর্বে থেকে অনুমোদন প্রাপ্ত অডিটোরিয়ামের বরাদ্ধ বাতিল করা হয়। যদিও দিক’র অনড় অবস্থানের কারণে একদিন পর প্রশাসন নাটকের প্রদর্শনীর অনুমতি প্রদানে বাধ্য হয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দিক’র তৎকালীন দ্বায়িত্বরতগন সংগঠনের নীতি নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখাএবং শুরু থেকে দিকের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনার ধরন প্রকৃতি বিবেচনা করে ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনের কিছু কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এর অংশ হিসেবে সংগঠনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। সংগঠনের গঠনতন্ত্র সংশোধন, সদ্যসাবেক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের পরবর্তী কমিটির কার্যনির্বাহী পরিষদের রাখার প্রথা, দলগঠন ( Team building) চর্চা, ব্যাক্তিগত ও দলগত স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং সমঝোতা, সমআদর্শ ও সমজাতীয় সংগঠন এবং সংগঠন সমূহের যৌথ ফোরাম সমূহের সাথে সংযোগ স্থাপন, সদস্যদের নীতি নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ এবং জীবন দক্ষতার উন্নয়নে সহায়তামূলক কার্যক্রমে গুরুত্ব প্রদান সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সংগঠন দিক নাট্য সংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পরিষদ ও ফেডারেশনের সাথে অফিসিয়াল সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে শিল্প সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনের গুণিজনদের পরামর্শক্রমে নিজের নাম আংশিক সংশোধন করে দিক থিয়েটার করে। পর্যায়ক্রমে দিক থিয়েটার ২০০৫ সালে সিলেটের নাট্যদল গুলোর যৌথ ফোরাম সম্মিলিত নাট্য পরিষদ এবং ২০০৭ সালে বাংলাদেশের থিয়েটার আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সদস্যপদ লাভ করে।বর্তমানে সংগঠনটি এই দুইটি ফোরামের নির্বাহী কমিটি অংশ হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

 

দিক থিয়েটারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সমূহঃ

১. বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত অধ্যয়নের পাশাপাশি শিল্পের অন্যতম যৌগিক মাধ্যম নাট্য চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানবিক, শুদ্ধ জীবনবোধ সম্পন্ন এবং নেতৃত্ব দানে সক্ষম মানুষ তৈরি করতে সহায়তার মাধ্যমে সামাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখা।

২. সদস্যদের প্রকৃত দলগত ভাবনা, শৃঙ্খলা ও অনুশাসনের যথাযথ চর্চার মাধ্যমে জীবন দক্ষতা অর্জনে সহযোগিতা করা।

৩. মুক্তচিন্তার চর্চার ক্ষেত্র তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা মূলক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সাংগঠনিক দক্ষতা, সহনশীলতা ও সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মানে অবদান রাখা।

৪. থিয়েটার আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে স্থানীয় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নাট্যাঙ্গনে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মানবিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দ্বায়িত্ব পালনের উপযোগী করতে নিজেদের সমৃদ্ধ করা।

দিক থিয়েটারের উদ্দেশ্য সমূহঃ

১. প্রাথমিকভাবে দিক থিয়েটার বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

২. বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে সকল বিভাগীয় শহর তথা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সমমনা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সমন্বিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণে সচেষ্ট থাকা ও নিজেদের ভাবাদর্শ প্রচার ও সুদৃঢ় অবস্থান তৈরিতে কার্যকরী অবস্থান তৈরীতে ভূমিকা গ্রহন করা।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমনা সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী
সংগঠন সমূহ ও জোটের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।

৪. থিয়েটার বিধি সমুহের যথাযথ অনুসরণ এবং গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন বিস্তারে প্রতিশ্রুত থাকা।

৫. সামাজিক রাষ্ট্রীয় মানবিক ও কল্যাণমূলক কাজ সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।

৬. একটি অন্যতম যৌগিক মাধ্যম নাট্যকলার বিভিন্ন শাখায় কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও চর্চার বহুমাত্রিক কর্যক্রম পরিচালনা করা।

৭. সংগঠনের কর্মকান্ড ও পরিচিতি বিস্তৃতির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকাশনা সম্পাদনা ও প্রকাশ করা।

৮. সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রক্টরিয়াল বিধি বিধান যথাযথ ভাবে অনুসরণ করা।

মনের জানালা ধরে

স্মৃতির বাক্সটা একটু খুলি। তখন সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছি। যা দেখি তাতেই কৌতুহল। গ্রাম থেকে শহরে...

দিক-স্মৃতি

তখন মূলত হল আর মদিনা মার্কেট ঘিরে আমাদের আনাগোনা। ডি বিল্ডিং, সি বিল্ডিং ও সি বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন...

আরও কিছু কথা…

স্মৃতির বাক্স খুলে বসলে ফুলের সুবাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে অজস্র দৃশ্য। দেখতে পাই কত ছবি, শুনতে পাই কত...

নাটক : টিনের তলোয়ার

নাটক : টিনের তলোয়ার রচয়িতা : উৎপল দত্ত নির্দেশক : ধীমান চন্দ্র বর্মণ সহকারী নির্দেশক : আব্দুল...

২৫ তম জন্মদিন দিক থিয়েটার

নাটকে সাম্যের আন্দোলন,জীবনের ভাষায় মুক্তি অন্বেষণ' - এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শাবিপ্রবি তথা সিলেটের...

আসেন একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি

Ledis and Gentelman, আসেন একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। একটা সময়ে আমাকে অনেকেই প্রশ্ন...

প্রকৃতি ও প্রেম

আকাশের তারা দেখার সবেচেয়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতি কি জানেন?ভাবছেন তারা দেখার আবার পদ্ধতি কি?তারা তো খালি...

জীবনের মাঝে মোটিভেশন খুজি

আমি জীবনের মাঝে মোটিভেশন খুজি।বলাকা ব্লেড দিয়ে সদ্য বেড়ে ওঠা দাড়ি কেটে আমি যখন সাস্টে আসলাম তখন...

শুভ জন্মদিন দিক থিয়েটার

'নাটকে সাম্যের আন্দোলন,জীবনের ভাষায় মুক্তি অন্বেষণ' - এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শাবিপ্রবি তথা...