স্মৃতির বাক্স খুলে বসলে ফুলের সুবাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে অজস্র দৃশ্য। দেখতে পাই কত ছবি, শুনতে পাই কত গান। ধুলো আস্তরণ পড়লেও পুরোপুরি মুছে যায়নি। মাঝখানে অনেকগুলো বছর ভীষণ ব্যস্ততায় কেটেছে। ক্যারিয়ার গড়ার অবিরাম প্রয়াস, পিছন ফিরে দেখার অবকাশ খুব কমই মিলত। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো নিয়ে ভাবতে গেলেও মনে হতো সেসব বুঝি অন্য কোনো জীবনের গল্প, অন্য কারও… আমার নয়। এখন এই দূর পরবাসে কোনো অবকাশে স্মৃতিচারণা মন্দ লাগে না।

দিকের সঙ্গে বহু স্মৃতি আছে। কত কত নাটক হয়েছিল: কবর, মহারাজের ঘুম নেই, শেকল, সুবচন নির্বাসনে, বিহঙ্গ, সালিশ, মহাপ্রলয়, কুরসি, হত্যার শিল্পকলা, ক্রীতদাসের হাসি, নীল ময়ূরের যৌবন, বিসর্জন। আরও দুয়েকটা নাম ভুলে গেছি। আমাদের সময়কার (২০০৫-২০১১) বেশির ভাগ প্রদর্শনীর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিলাম। তখন দিকের আয়োজনের তুলনায় কলাকুশলী কম ছিল। সেই সুবাদে এই অধমও কয়েকটা নাটকে মঞ্চে উঠবার সুযোগ পেয়ে যায় এবং অভিনয়ের কসরত করে। এ সবই এই ক্ষুদ্র জীবনের বড় ঘটনা হিসেবে স্মৃতির বাক্সে সযতনে জমিয়ে রেখেছি।

প্রথমদিকে দিকে যাঁদের সান্নিধ্য পেয়েছি, অনেকেই দূরে চলে গেছেন। বিবিসাব নাটকে সোহেলভাই, সৈকতভাই, রাজীবভাই, মহসিনভাই, শিমু আপু, ফাহিমভাই, মামুনভাই অভিনয় করেছিলেন। তখন জিয়াভাই, মাসুমভাই, সেবু আপু, জনিভাই, ইমনভাই, অরূপদাও ছিলেন। তারপর আমরা বেশ কয়েকজন সমসাময়িক যোগ দিই—তন্ময়, পলাশ, পাবেল, লাকু, জাহিদ, সাবরিন, তারিকুল, মন্টি দিদি, ফয়েজ, আলমগীর…আরও অনেকে পরবর্তীতে এসেছে, সেটা লম্বা তালিকা। ভুলবশত এখানে কারও নাম বাদ পড়লে দুঃখিত।

নাটকের মহড়াতে বিস্তর আনন্দ হতো। সাংগঠনিক কাজকর্মের বাইরেও আমাদের অনেক আড্ডার স্মৃতি আছে। সেসবই বেশি মনে পড়ে এখন। ছুটির দিনেও আমরা ক্যাম্পাসে গিয়ে জটলা করতাম। কখনো মদিনা মার্কেটে, চায়ের দোকানে, কখনো বা মেসে। আমরা অনেকে একই মেসে থাকতাম, সুতরাং দিন-রাতের কোনো বাধা ছিল না।

পল্লবী রোডের মেসের ছাদে গভীর রাত অবধি আমাদের আড্ডা হতো। সেখানে রাজীবভাই ও মামুনভাই আকাশের পানে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আধ্যাত্মিক বয়ান দিতেন। সেই আসরের আলোচনায় ঈশ্বর-পৃথিবী-ভালোবাসা কিছুই বাদ যেত না। তন্ময় শোনাতো বাস্তব জীবনের লড়াকু গল্প, পলাশ উদাত্ত গলায় গান ধরতো, জাহিদ মজার মজার গল্প বলতো আর হরিপদ মাঝে মধ্যে নৃত্য করতো। অরূপদা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাসের জন্য এসব আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতেন। আমাকে নিয়েও অনেক ঠাট্টা ও মজা করতো সেই সব আসরে, চুপচাপ শুনতাম। মন্দ লাগতো না। আসর জমানোর মতো গুণ আমার ছিল না। তবু কখনো বেশি চাপে পড়ে দুয়েকটা মুখস্ত কবিতা শুনিয়ে দিয়ে রেহাই পেতাম। এসব বিরামহীন কর্মকাণ্ডের মধ্যেও আমরা যে কীভাবে পরীক্ষা দিতাম আর পাসও করে যেতাম—সে এক বিস্ময়। ‍

দিনগুলো ফিরে পেতে মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে…

-আশিস আচার্য
দিক থিয়েটার