জীবনের মাঝে মোটিভেশন খুজি

জীবনের মাঝে মোটিভেশন খুজি

আমি জীবনের মাঝে মোটিভেশন খুজি।
বলাকা ব্লেড দিয়ে সদ্য বেড়ে ওঠা দাড়ি কেটে আমি যখন সাস্টে আসলাম তখন আমার দুই চোখে আকাশচুম্বি কৌতুহল। ঠিক যেমনটি বাবার হাত ধরে প্রথমবার মেলায় গেলে হয়। আর সবার মতো আমার কিছু একটা করে ফেলার অদম্য ইচ্ছাটাকে চাপা দিয়ে রেখেছিলো লজ্জা, ভয়, সঙ্কোচ আর একটু প্রস্রয়ের অভাব। বাবা, মা ভাই, বোন, বন্ধু সবার মধ্যমনি হয়ে বড় হওয়া এই আমার সম্বল ছিল তখন কিছু পুথিগত বিদ্যা, একটা ডিজুস সিম কার্ড আর ভালো রেজাল্ট করে বড় হতে হবে- এমন প্রত্যাশার চাপ। প্রথম তিন চার মাস তাই ওই কিছু একটা করে ফেলা আর হয় নাই।
৩২০ একরের বিশ্ববিদ্যালয় তখন আমার কাছে একটা দৈর্ঘ প্রস্থ বেষ্টিত আয়োতন ছাড়া আর কিছুই নয়। হাতে গোনা কিছু ক্লাসমেট ছাড়া আমার সঙ্গি ছিল পেট্রোলিয়াম সিস্টেমের কিছু বই আর র‍্যাগ নামের একটা আতঙ্ক। ফেসবুক ইউটিউব ছিল না বলে আমার গন্ডি সীমাবদ্ধ ছিল ক্লাসরুম থেকে মেস, সময় অসময়ে র‍্যাগ আর মাঝে মাঝে রাগীব আলির চা বাগান আর টিলা। তারপর হঠাৎ করেই একদিন জীবন মোড় নিল। মেসের এক বড় ভাই ধরে নিয়ে গেল কোন এক নাটকের আড্ডায়। ডি বিল্ডিং এর সামনে বিকাল ৫ টার পর ঘাসের উপর গোল করে বসে অনেক সংগঠন ই তখন তাদের কার্যক্রম চালায়। বিষয়বস্তু না বুঝলেও ক্যবলার মতো বসে ছিলাম। এরপর তাদের আলোচনায় বুঝলাম কিছুখন পর ফ্লোর শুরু হবে। একটা ফ্লোর, তার আবার শুরু করার কি আছে? আমি অবাক। আমি তখনো বুঝতে পারি নাই যে আমার জীবনমুখি শিক্ষাসফর শুরু হয়ে গেছে।
তখন মনে হয় ক্লাশরুম এর ভিতর ফ্লোর করার পারমিশন দিত না। ডি বিল্ডিং এর চারতলায় রুম এর বাইরে একটা জায়গায় ঐ বিষয়টা করা হতো। আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম এতোখন ভরাট কন্ঠে কথা বলা সিনিওর এক বড় ভাই নির্দিধ্বায় পরিপাটি করে ঝাড়ু দিচ্ছে। আমার বিবেক প্রথমবারের মত নাড়া খেল। পুথিগত বিদ্যার পাশাপাশি আমার জীবনমুখি শিক্ষা শুরু হলো। এরপর শুরু হলো ফ্লোর নামক বিষয়বস্তু। মেঝে তে নাটকের রিহার্সেল করা হয় বলে সম্ভবত ফ্লোর বলে। এক বড় ভাই ঐদিন ২০ মিনিট পড়ে আসলো। উনাকে আমি তখন যমের মতো ভয় পেতাম কারন উনি মাঝেমাঝেই আমাদের মেসে গিয়ে নতুন মুরগি হিসাবে আমাদের র‍্যাগ দিতো। ২০ মিনিট লেইট করে আসার শাস্তি সরুপ তাকে ব্যাঙ লাফ দিতে বলা হলো। ব্যাঙ লাফের সাথে আমি স্কুল জীবন থেকেই পরিচিত। কিন্তু মাঝারি সাইজের ভুরি নিয়ে সিনিয়র এক বড় ভাই যখন কিংভুত কিমাকার পাবে লাফানো শুরু করলো তখন চারপাশে অনেকেই হাসি লুকানোয় ব্যস্ত। আর আমি তখন অবাক নয়নে জীবনের অনেক বড় একটা শিক্ষা নিলাম।
এরপর আমি নিয়মিত ভাবেই অনিয়মিত। মাঝে মাঝে ফ্লোরে যাই। মিটিং এ ক্যবলার মতো বসে থাকি। মজা পাই, আবার পাই না। সবকিছুই আছে আবার কি যেন নাই। কলেজ জীবনে গার্লস কলেজের সামনে দাড়ানো কোন মেয়েকে দেখে মনের মধ্যে যেই ভালো লাগা, সংকোচ আর ভয় জন্মে অনেকটা সেই রকম ইনফ্যাচুয়েশন। এরপর আরো কিছু ঘটন অঘটন। এগুলো পরে একসময় বলা যাবে। আমার অস্থির মনটা স্থির হতে আর সময় নেয়নি। ঢুকে গেলাম সালিশ নামক নাটকে। আমার শিক্ষা জীবন আবারো শুরু। ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত একটা ঘোরের মতো কেটে গেছে আমার জীবন। অনেক উত্থান পতন ছিল। আমি অনেক লাকি ছিলাম যে আমার মাথার উপর ছায়ার মতোন কিছু বটবৃক্ষ ছিল। আমি প্রতিদিন তাদের কাছে শিখতাম।
আমি ক্যাম্পাসে ছোট্র একটা মিছিলে বুক খাড়া করে একজনকে স্লোগান দিতে দেখেছি। আবার তাকেই নাটকের মহড়ায় এ ভরাট কণ্ঠে আসর জমাতে দেখেছি। আমি পকেটে টাকা না থাকায় একজনকে মদিনা মার্কেট থেকে হেটে ক্যাম্পাসে যেতে দেখেছি আবার তাকেই নির্ভুল ভাবে উৎসবের বাজেট হ্যন্ডেল করতে দেখেছি। আমি তাকে ক্লাসে টপ রেজাল্ট করতে দেখেছি আবার একই সাথে তাকে নাটকের প্রয়োজনে মাথার চুল কেটে ফেলতে দেখেছি। আমি সম্মিলিত জোটের রগরগে মিটিং এ সহযোগী সংগঠনের কাছ থেকে দৃড় কন্ঠে আমাদের দাবি আদায় করতে দেখেছি আবার তাকেই নরম কন্ঠে আমাদের নাটকের ভাষা বোঝাতে দেখেছি। আমি একজনকে বাচ্চাদের মতো রাত জেগে মোস্ট ওয়ান্টেড গেম খেলতে দেখেছি আবার তাকেই নাটকের রিহার্সেলে থমথমে চেহাড়ায় ঝাড়ি মারতে দেখেছি। আমি একজনকে মেসে সুনিপূন হাতের কাজ করতে দেখেছি আবার তাকেই সেটে স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে লাইট ডিজাইন করতে দেখেছি। মাথা ব্যথা করলে ভাইজান বলে আমার এক বোনকে মাথায় স্নেহের হাত বুলাতে দেখেছি আবার তাকেই ডোম্বি হয়ে দৃড় হাতে কাধে হাত রাখতে দেখেছি। আমি একজনকে সারাজীবন ক্যপস্টান নামক অখাদ্য সিগারেট খেতে দেখেছি আবার তাকেই বাজেট সর্ট পড়লে হাজার টাকা ডোনেট করতে দেখেছি। “দিক বুঝি না, নাটক বুঝি না, আমি তোমাদের চিনি। কালকে যদি নাটক বাদ দিয়ে তোমরা গান এর সংগঠন শুরু করো তাহলে আমিও তাই করবো”। এইভাবে একজনকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে দেখেছি আবার তাকেই ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে দুরে চলে যেতে দেখেছি। আমি দুইজনকে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে দেখেছি আবার তাদেরই অভিমানে দুরে চলে যেতে দেখেছি।
দিক আমার কাছে একটা অনুপ্রেরনার নাম। একটা বহুমুখি বাক বিষিষ্ট যাত্রার নাম। এই সফরের মোড়ে মোড়ে দুঃখ, কস্ট, হাসি আনন্দ দিয়ে সাজানো। একটি বিশ্ববিদ্যালয় যখন পুথিগত পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনমুখি শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয় তখন এইসব সেচ্ছাসেবি সংগঠন গুটি গুটি পায়ে তাদের পাশে এসে দাড়ায়। কাধে হাত রেখে মনে ঢুকিয়ে দেয় একটা মন্ত্র। খোলা বাজারে যা বিবেক বলে পরিচিত। আর নাটক?? জীবনই তো মস্তোবড় এক মঞ্চ ভায়া। যাও, শুরু করো তোমার পার্ট।

-জাহিদ হাসান
দিকথিয়েটার।

শুভ জন্মদিন দিক থিয়েটার

শুভ জন্মদিন দিক থিয়েটার

‘নাটকে সাম্যের আন্দোলন,জীবনের ভাষায় মুক্তি অন্বেষণ’ – এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শাবিপ্রবি তথা সিলেটের স্বনামধন্য নাট্য সংগঠন দিক থিয়েটার ১৯৯৯ সালের ১৮ই আগস্ট যাত্রা শুরু করে “দিক নাট্যসংঘ” নামে, যা আজ দিক থিয়েটার নামে পারিচিত । কালের পরিক্রমায় দীর্ঘ ২৩ বছর পাড়ি দিয়ে আজকের দিক থিয়েটার এর পথচলা অব্যাহত আছে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস ছাপিয়ে পুরো দেশের গণ্ডি জুড়ে। ক্যাম্পাসের নাটক পাগল কিছু মানুষদের একত্রিত করে একটি সুতায় বাঁধতে পেরেছে বলেই দিকের এই জয়যাত্রা। আজ দিক থিয়েটারের ২৩ তম জন্মদিন। এই দীর্ঘ সময় দিকের পাশে থেকে, যারা দিকের পথচলাকে মসৃণ করেছেন, দিক থিয়েটার সেই সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে। আপনাদের এহেন সমর্থন দিক থিয়েটারকে সামনে আরো ভালো ভালো কাজ করায় উদ্যোমী করবে নিঃসন্দেহে।

মানুষের মুক্তি ঘটুক বৈষম্য থেকে। নতুন উদ্যামে আবার মানবতার জয়গান গেয়ে উঠুক সবাই।