সহকারী নির্দেশক : আব্দুল বাছিত সাদাফ ও আর্নিকা দেব।
“টিনের তলোয়ার” নাটকটি শ্রদ্ধেয় নাট্যজন ও অভিনেতা উৎপল দত্তের রচিত। নাটকটি ১৮৭৬ সালের প্রেক্ষাপটে লেখা, যখন তৎকালীন সময়ে বাংলা থিয়েটার প্রচলিত ধারা থেকে বের হয়ে নাটকের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর প্রয়াস শুরু করে। ব্রিটিশ শাসকেরা এ প্রয়াসকে হুমকি মনে করে বাংলা থিয়েটারের কন্ঠস্বরকে রোধ করার জন্য জারি করে ” নাট্য নিয়ন্ত্রণ আইন”। একটি ধুঁকে ধুঁকে চলতে থাকা থিয়েটারের দল, যারা অস্ত্বিত্বের সংকট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে, শেষপর্যন্ত শাসকের রক্তচক্ষুর ভয়কে জয় করে নাট্যমঞ্চে দাঁড়িয়ে শাসকের জুলুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে- তাদের গল্প নিয়েই এ নাটক। পাশাপাশি নাটকটিতে রয়েছে খাদ্য পাচার ও তার ফলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের কারণে মৃতপ্রায় মানুষের বীভৎস চিত্র। এ নাটকে প্রান্তিক মানুষ আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন রাখেন, কেন থিয়েটার আজও তাদের কথা বলতে পারছে না, কেন থিয়েটার কেবল সমাজের উঁচুতলার মানুষের প্রতিচ্ছবি হয়েই থেকে যাচ্ছে, কেন বাংলা থিয়েটার সমাজের ঘৃণ্য বাস্তবতা এড়িয়ে কেবল অলীক স্বর্গ রচনা করে চলেছে নাট্যশালায়। নাটকটি আজকের দিনে দাঁড়িয়েও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
প্রায় ৮ মাসের সাধনা এই নাটকটি। দিকের অগ্রজ এবং অনুজদের প্রচেষ্টায় ৩রা অক্টোবর মঞ্চে এলো দিক থিয়েটারের স্বপ্নের এই প্রযোজনাটি। দিকের এই সাহস বজায় থাকুক জন্ম-জন্মান্তর!
নাটকে সাম্যের আন্দোলন,জীবনের ভাষায় মুক্তি অন্বেষণ’ – এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শাবিপ্রবি তথা সিলেটের স্বনামধন্য নাট্য সংগঠন দিক থিয়েটার ১৯৯৯ সালের ১৮ই আগস্ট যাত্রা শুরু করে “দিক নাট্যসংঘ” নামে, যা আজ দিক থিয়েটার নামে পারিচিত । কালের পরিক্রমায় দীর্ঘ ২৪ বছর পাড়ি দিয়ে আজকের দিক থিয়েটার এর পথচলা অব্যাহত আছে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস ছাপিয়ে পুরো দেশের গণ্ডি জুড়ে। ক্যাম্পাসের নাটক পাগল কিছু মানুষদের একত্রিত করে একটি সুতায় বাঁধতে পেরেছে বলেই দিকের এই জয়যাত্রা। আজ দিক থিয়েটারের ২৫ তম জন্মদিন। এই দীর্ঘ সময় দিকের পাশে থেকে, যারা দিকের পথচলাকে মসৃণ করেছেন, দিক থিয়েটার সেই সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে। আপনাদের এহেন সমর্থন দিক থিয়েটারকে সামনে আরো ভালো ভালো কাজ করায় উদ্যোমী করবে নিঃসন্দেহে। মানুষের মুক্তি ঘটুক বৈষম্য থেকে। নতুন উদ্যোমে আবার মানবতার জয়গান গেয়ে উঠুক সবাই।
জয় হোক নাটকের, জয় হোক মানবতার।। শুভ জন্মদিন দিক থিয়েটার🏵️
Ledis and Gentelman, আসেন একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। একটা সময়ে আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করতো, কেন সংগঠন করি, কেন থিয়েটার করি। তখন একটা ভালোলাগা থেকে করি বলে উত্তর দিয়ে দিতাম। এর বেশি কখনো চিন্তা করি নাই। কিন্তু ক্যেম্পাস ছাড়ার ১১ বছর পরে আমি এখন বুঝতে পারি কিসের টানে আমি থিয়েটারে নিজেকে জরিয়েছিলাম।
Outcome based education (OBE) এখন এক বহুল আলোচিত কনসেপ্ট। Traditional education system (TES) যেখানে একটা structured curriculum system এ রিজিড থাকে, OBE সেখানে flexible curriculum কে ওয়েলকাম জানায়। TES যেখানে Academic education এর উপর গুরুত্ব দেয়, OBE সেখানে সমসাময়িক learning process কে প্রাধান্য দেয়। TES system এ evaluation process হয় exam driven অপরদিকে OBE system এ evaluation হয় ongoing problem solving capacity দেখে। To recapitulate the whole words, In traditional system, teacher follows the syllabus as a rigid and non negotiatable way whereas outcome based education system allows teachers to be creative and innovative in designing their program. বুঝতে কি একটু কস্ট হচ্ছে? আসেন, একটু ছোটবেলা থেকে ঘুরে আসি। আমার মেয়ের বয়স সাড়ে চার বছর। আমি ওকে নিয়ে নিয়মিত পড়তে বসি। একদিন বাংলা বই নিয়ে বসছি। ক এর পাশে একটা কলম এর ছবি দেখিয়ে বললাম, ক তে কলম। দেখছো মা, কি সুন্দর লাল রং এর একটা কলম। এটা হচ্ছে Traditional education system এর example. আমার মেয়ে আমার মুখে হাত দিয়ে আমাকে থামিয়ে বললো, বাবা, ক তে করোনা ভাইরাস। আমি গুড বলাতে সে উৎসাহ পেয়ে বলা শুরু করলো ক তে কিটক্যাট, কোক, প্যারোট (কাকাতুয়া)। এই যে সমসাময়িক ইনোভেটিভ example যেটা সিলেবাসের বাইরে থাকা সত্বেও accepted, এবং inspirational, এটা হচ্ছে Outcome based education এর example. এখন প্রশ্ন হচ্ছে কয়জন স্কুল টিচার ক এর পাশে কলম, কলা বা কাঠাল লেখা না দেখে বাচ্চারা সমসাময়িক যেই বিষয়বস্তু দেখছে বা শুনছে সেই উত্তর গ্রহন করার মানষিকতা রাখেন।
টাইটেল এর সাথে লেখার বিষয়বস্তু অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে মনে করে হতাশ হইয়েন না ভাই ও বোনেরা। আমি লাইনে আসছি। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো ঐ Traditional education system থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বের হতে পারে নাই। আর ঐ জন্যই আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ গ্রাজুয়েট বের হয় কিন্তু প্রোপোরশন ওয়াইজ অরিজিনাল রিসার্চার বের হয় না। প্রবলেম ধরিয়ে দেয়ার মতো হাজার লোক পাওয়া যায় কিন্তু প্রবলেম সলভ করার লোক পাওয়া যায় না। ব্রিলিয়েন্ট রেজাল্ট করে প্রভাশক হচ্ছে কিন্তু সেই মান্ধাতা আমলের সিলেবাস থেকে বের হতে পারে না। বড় বড় কম্পানির বস হচ্ছে কিন্তু যোগ্য লিডার হতে পারছে না। বিসিএস নামক এক মরিচিকার পিছনে ছুটছে কিন্তু একজন entrepreneurs হিসাবে হাজার মানুষের সপ্ন তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এভাবেই meritocracy নামক বিষয় থেকে আমাদের জেনারেশন ছিটকে বেড়িয়ে যাচ্ছি। এরকম আরো হাজার উদাহরন দেয়া যায়। তাই তো বলি সুধীসমাজ, চিন্তা করেন। শুধু চায়ের টঙে আর অনলাইন এর মোহময় জগতে ঝড় না তুলে চিন্তা করেন কিভাবে এই প্যরাডক্স থেকে বের হওয়া যায়। নাহ, আমিও পাড়ি নাই Traditional education system এর এই গোলকধাঁদা থেকে বের হতে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অতীতকে ধরে রাখার যে অযৌক্তিক কালচার কয়েক যুগ ধরে চলে আসছে তা ভেঙে নতুনকে বরন করে নেয়ার সাহস কয়জনের আছে? (এখানে বুঝতে হবে, অতীত কে ধরে রাখা আর অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া দুটি আলাদা কনসেপ্ট)। তবে আমি সংগঠন নামের একটা পরিপূর্ন সংবিধান বিশিষ্ট ভলেন্টিয়ার অর্গানাইজেশনের পার্ট হবার একটা সুযোগ পেয়েছিলাম। একটা বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্টুডেন্ট কে যখন জীবনমুখি শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয় ঠিক তখন এসব সংগঠন তাদের পাশে এসে দাড়ায়। ওরা মানুষকে ভেঙেচুড়ে নতুন মানুষ তৈরি করে। ইন্দ্রিয় গুলোকে পিটিয়ে, শান দিয়ে চকচকে করে একটা group interest কে maximize করার জন্য personal interest কে বিসর্জন দিতে শেখায়। সর্বোপরি এরকম ছোট বড় শিক্ষনিয় বিষয় নিয়ে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সংগঠনগুলো টিকে আছে আমাদের ভালোবাসা নিয়ে।
মোহতারামে হাজেরিন, এবার শুরু করি থিয়েটার কেন করবো। আমার মতে থিয়েটার একটা টিমওয়ার্ক। একটা টিমের সাথে ব্লেন্ড হয়ে কাজ করার মানষিকতা তৈরির আদর্শ প্লাটফরম। লাইট, সেট, মিউজিক, কস্টিউম আর ডায়লোগ মিলে যে মহাকাব্য একটা স্টেজে তৈরি হয় তা মনে হয় আর কোথাও পাওয়া যায় না। প্রত্যেকটা উপকরেনর সুক্ষ মিশ্রন একটা পারফেক্ট নাটকের জন্য অপরিহার্য। আর এই জন্যই গর্ভবতি বর্তমান নাটকের ৫০ মিনিট স্টেজে আমার ডায়লোগের বিচরন থাকলেও সবার মন কেড়ে নিয়েছিল পিছনে থাকা ফয়েজ আর হরির অদ্ভুত সামজস্যপূর্ন অঙ্গভঙ্গি। অথচ পুরো নাটকে তাদের একটা ডায়লোগও ছিল না। ভুল করা মানুষের সহজাত অভ্যাস। কিন্তু ভুলটাকে শুধরে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। এই ইম্প্রোভাইজেশন করার শিক্ষা থিয়েটার থেকে আর কে ভালো দিবে।
এবার একটা গল্প দিয়ে শেষ করি। হত্যার শিল্পকলা নাটকের ফ্লোর চলে কোন এক ছুটির দিনে। লান্চ ব্রেক। সবাই ভার্সিটি গেটে গেছে খেতে। আমি আর মামুন ভাই লাইব্রেরী বিল্ডিং এর সামনে ট্যংকির উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছি। এমন সময় আমার এক ক্লাসমেট সামনে দিয়ে বই ঝুলিয়ে চলে গেল গ্রুপ স্টাডি করতে। আমি মামুন ভাইকে বললাম, আচ্ছা ভাই, এই যে পড়াশোনায় কিছুটা ফাকি দিয়ে আমরা সংগঠনে সময় দিচ্ছি। লাভ কি? ভাই বলেছিল, শোন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু পড়াশোনা করে তাদের হয়তো একটা সিকিউর ভবিষ্যত হবে। কিন্তু যারা পড়াশোনার পাশাপাশি সংগঠন করে তাদের ভবিষ্যতের সাথে সুন্দর একটা স্মৃতি থাকবে। আর বেঁচে থাকার জন্য কিছু মধুর স্মৃতি খুবই দরকার।
স্মৃতির বাক্সটা একটু খুলি। তখন সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছি। যা দেখি তাতেই কৌতুহল। গ্রাম থেকে শহরে গিয়েছি, গায়ে তখনো কাদা-মাটির গন্ধ, দু-চোখে অবাক বিস্ময়। কতো জায়গা থেকে ছেলেমেয়েরা এসেছে! শুধু পড়াশোনা নয়, আরও কতো বিচিত্র সব কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত তারা। একদিন দেখি ‘ডি’ বিল্ডিংয়ের সামনের রাস্তায় ‘দিক নাট্য সপ্তাহ’ নামে একটা দোকানমতো খুলেছে। লাল জামা পরা একজন ছাত্রী নাটকের টিকিট বিক্রি করছেন। তাকে ঘিরে আরও কয়েকজন সিনিয়র বসে আড্ডা দিচ্ছেন। টিকিটের দাম অল্প। নিয়ে নিলাম একটা। হলুদ কাগজে কালো কালিতে লেখা, নাটকের নাম: ‘বিবিসাব’। তখনও আমার নাটক দেখা টেলিভিশন পর্যন্তই সীমিত ছিল। মঞ্চনাটক জিনিসটা কেমন হয় জানতে ইচ্ছে হলো। সেদিন সন্ধ্যায় মিনি অডিটোরিয়ামে গিয়ে ‘বিবিসাব’ দেখলাম। বিস্ময় জাগল এই দেখে যে খালি মঞ্চে একদল জীবন্ত মানুষ কী চমৎকার অভিনয় করে গেল। সেই লাল জামা পরা মেয়েটিই এখানে বিবিসাব! আর তাঁকে ঘিরে থাকা বাকিরাও মঞ্চে বিভিন্ন চরিত্রে। লাইট, মিউজিক, কাহিনি, সংলাপ—সব মিলিয়ে যেন ঘণ্টাখানেকের জন্য আরেক জগতে আমায় নিয়ে গেল! যবনিকাপাতের পরে দেখি তাঁরা আবার সাধারণ মানুষের মতোই নিচে নেমে ঘোরাফেরা করছেন, কথা বলছেন, হাত মেলাচ্ছেন। আমারও খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তাঁদের কাছাকাছি যাই, কিছু জিজ্ঞেস করি। কিন্তু তা না করে বেরিয়ে আসি, যদিও সেই নাটকের রেশ রয়ে গিয়েছিল। মাথার ভেতরে ঘুরছিল কীভাবে এত সুন্দর করে নাটক বানায়, আবার সেটা নির্ভুল অভিনয়ের মাধ্যমে সরাসরি মঞ্চে প্রদর্শন করে দেখায়? পরের দিনও ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখি দিকের স্টলে সেই নাটকের মানুষগুলোই বসে আছেন। সাহস করে কাছে গেলাম। তাঁরাই আমায় ডেকে আলাপ করলেন, সদস্য ফর্ম এগিয়ে দিলেন। নিয়মকানুন জানালেন, পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। একটু ভড়কে গেলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কথা মনে পড়ল, নাটকের দলে ভর্তি হতে নিশ্চয়ই আরও কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। তবু মনে হলো, চেষ্টা করে দেখি কেমন হয়। আসলে তখন মঞ্চনাটক ও অভিনয় সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারনা পাওয়ার ইচ্ছেটা বাড়ছিল।
তারপর নানাভাবে দিক-এর সঙ্গে জড়িয়েছি। তবে অভিনয় শেখার চেষ্টা করেও বেশিদূর এগোতে পারিনি। তারপরও সংগঠনের বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে আনন্দ পেতাম। বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর মনে হলো, অভিনয়টা বোধহয় কিছু কিছু শিখেছি। আসলে ততদিনে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে, নানা রকম অভিজ্ঞতাও হয়েছে। সাহিত্যের ক্লাসে যা যা পড়তাম, মঞ্চের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করতাম। আর মঞ্চের চরিত্রের সঙ্গে জীবনের সামঞ্জস্য খুঁজতাম । Shakespeare-এর As You Like It নাটকের একটা সংলাপ আমায় চমকে দিয়েছিল:
“All the world’s a stage, And all the men and women merely players; They have their exits and entrances, And one man in his time plays many parts,”
মানে গোটা পৃথিবীটাই এক সুবিশাল রঙ্গমঞ্চ, আর সব নারী-পুরুষ তাতে শুধুই অভিনয়শিল্পী। তাদের নিজ নিজ ‘প্রবেশ’ এবং ‘বাহির’ আছে। আবার একই মানুষ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে। আজও মনে হয়, কথাগুলো যথার্থ। ঘরে-বাইরে সবখানে আমরা তো সবাই অভিনয় করে চলেছি। একই মানুষের কত রূপ: ছাত্র, টিউশনির মাস্টার, থিয়েটারকর্মী, কবিতাপাঠক, ঘোষক, সম্পাদক, চাকরিজীবী, সাংবাদকর্মী, অনুবাদক, দোভাষী, শান্তিরক্ষী, সেনা কর্মকর্তা, যাত্রী, পর্যটক ইত্যাদি কত না চরিত্র। সবই অস্থায়ী চরিত্র, কোনো একটাতে স্থির হতে পারিনি, এ যেন এক যাযাবর জীবনযাপন। আবার যখন বাড়িতে থাকি কখনো সন্তান, কখনো ভাই, কখনো স্বামী, কখনো বাবার চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। আজীবন এই অভিনয় করে যেতে হবে। ভালো অভিনয় না জানলেও মুক্তি নেই।
তখন মূলত হল আর মদিনা মার্কেট ঘিরে আমাদের আনাগোনা। ডি বিল্ডিং, সি বিল্ডিং ও সি বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন রুমে রিহার্সেল হতো। প্রক্টর অফিসে আগে থেকে রুমের জন্য আবেদন করে রাখতে হতো। গানবাজনা, নাটক তখন অনেকের চক্ষুশূল। প্রতিকূল পরিবেশ। যেকোনো সময়ে আয়োজন বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা নিয়েই কাজ করতাম।
ক্লাস শেষে সাধারণত বিকেলে অথবা ছুটির দিনে সকালে নির্ধারিত সময়ে হাজির হতাম। স্ক্রিপ্টের ফটোকপি সবার পকেটে। চেয়ার-টেবিল সবাই মিলে এককোণে সরিয়ে রাখার পর রুমটা একেকদিন ঝাড়ু দিতাম একেকজন। তারপরে গোল হয়ে বসে পাণ্ডুলিপি পাঠ, হালকা কিছু কোরিওগ্রাফি, সমবেত সংগীত বা শুধুই গল্পগুজব। হাতে হাতে মোবাইল বোধহয় তখনো আসেনি, তাই মহড়ার মাঝখানে উৎপাত কম ছিল।
সোহেলভাই তখনো সবার সিনিয়র। ক্যাম্পাসের পাট চুকে গেলেও প্রায় নিয়মিত আমাদের ফ্লোরে আসতেন। মাঝে মাঝে দীপ্তিদিও আসতেন। তাঁরা সিলেটেই চাকরি করতেন, সম্ভবত এনজিওতে। তাঁরা এলে আমরা খুশি হতাম, কারণ সেদিন ফ্লোরে বাড়তি খাবার সরবরাহ নিশ্চিত। অথবা কোনোদিন আমরা দল বেঁধে হাঁটতে হাঁটতে ইউনিভার্সিটি গেট পর্যন্ত যেতাম, তারপর সেখানকার কোনো টং দোকানে বসে ভাজাভুজি সাবাড় করতাম। কেউ কেউ প্রয়োজনের অতিরিক্ত চেয়ে নিত, কারণ বিল পরিশোধের দায় গৌরী সেনের। তাছাড়া তখন আমাদের হজমশক্তিও ছিল সাংঘাতিক।
মাঝে মাঝে সোহেলভাইয়ের বাসায়ও গিয়ে হানা দিতাম। তিনি সবাইকে প্রশ্রয় দিতেন। কারণ, দিক থিয়েটার ছিল তাঁর প্রাণের সংগঠন। তিনি হবিগঞ্জি টানে প্রাণবন্ত বাংলায় সাবলীল বক্তব্য দিতেন এবং আমাদের সস্নেহ শাসন করতেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানে, গুরুত্বপূর্ণ সভায়, আয়োজনে তাঁকে পাওয়া যেত। ক্যাম্পাস ছাড়ার পরও সম্ভবত তিনিই একটানা এত বছর ধরে সংগঠনে সময় দিয়েছেন। জাকিরভাই, লিংকনভাইসহ আরও অনেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতে আসতেন অনিয়মিত। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের আরও অনেকে কথা আমরা শুনতাম, তবে দেখা হয়নি। তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত, ব্যস্ত অনেক। সেলিমভাইকে আমরা অনেকেই সামনাসামনি দেখিনি এখনো। তখন ইন্টারনেট বা টেলিযোগাযোগ এতো সুলভ ছিল না। একবার বাবুভাই এসেছিলেন। ২০০৭ সালের সমাবর্তনে বেশ কয়েকজন একসঙ্গে এসেছিলেন। তাঁরা কেউ কেউ সরকারের বড় কর্মকর্তা। এখন আমরাও ব্যস্ত থাকি এবং তাঁদের অবস্থাটা উপলব্ধি করি। একটা পর্যায়ে চাইলেও খুব বেশি সময় সংগঠনে দেওয়া যায় না।
বিভিন্ন উৎসবে আমাদের টানা কয়েকদিন অনুষ্ঠান থাকতো। তখন দিনে-রাতে কাজ করতে হতো। এমনও হয়েছে সারা রাত ক্যাম্পাসে রান থ্রু রিহার্সেল করে ভোরে মেসে ফিরে ঘুম দিতাম। সেই বিকেলেই আবার ফাইনাল শো। তার মধ্যেই কারও সকালে ক্লাস, কারও টার্ম টেস্ট, কেউ ফুল আনতে শহরে যাবে, কেউ পোশাক জোগাড় করবে, কেউ লাইট, কেউ মিউজিক, কেউ ব্রুশিয়ার, কেউ সুভ্যেনির, কেউ খাবার, কেউ টিকিট বিক্রয়, কেউ অতিথি অভ্যর্থনা, কেউ অনুষ্ঠান ঘোষণা, কেউ সবকিছুর সমন্বয় ইত্যাদি কাজ নিশ্চিত করবে। কীভাবে যে সময়মতো সব সম্পন্ন হতো ঠিকঠাক—তা আজও আমার কাছে এক বিস্ময়। সবকিছু সামলে মঞ্চে অভিনয়টাও এদেরই করতে হতো, বাইরের কেউ নয়। তবে বড় অনুষ্ঠানে আমাদের সহায়তায় বাড়তি কয়েকজন এসে হাজির হতো। তাঁরা দিকের সদস্য, কিন্তু ফ্লোরে নিয়মিত আসতে পারতো না বিভিন্ন কারণে। কিন্তু প্রোগ্রামের বাড়তি চাপের সময় ঠিকই এসে সহযোগিতা করতো।
জিয়াভাই, মহসিনভাই ভালো সংগঠক ছিলেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের মতো নতুনদের খুব উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিতেন। শিমু-মহসিন জুটি তখন সারা ক্যাম্পাসে পরিচিত। তাঁদের দেখে আমাদেরও কারও কারও অব্যক্ত ইচ্ছে হতো প্রেম করার। তাহলে হয়তো ক্যাম্পাসে সময়টা অন্যরকম কাটতো। সে যাই হোক, সম্ভবত পরবর্তী সময়ে জাহিদ ব্যতীত আর কেউই এক্ষেত্রে সফল হয়নি। শিমু-মহসিন দুজনেই ভালো অভিনয় করতেন। শিমু আপুর আবৃত্তিও ছিল চমৎকার। কিন্তু দিকের প্রাণভোমরা ছিলেন রাজীবভাই। তিনি কথা কম কাজ বেশি নীতিতে বিশ্বাসী, সিনিয়র-জুনিয়র সকলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আপনজন। নীরবে সব সাংগঠনিক ঝামেলা সামলে নিতেন। টাকাপয়সার যে কোনো সমস্যায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। আমরা ভাবতাম, তাঁর ভাণ্ডার অফুরন্ত! অভিনয়ে তাঁকে কম দেখা গেলেও সেটা খুব ভালো জানতেন। নির্দেশনা, আলোকসম্পাত, শব্দ সংযোজন, মঞ্চসজ্জা, পোশাক পরিকল্পনা, সংগীত, চরিত্র নির্ধারণ, লেখালেখি, সম্পাদনা, শিল্প নির্দেশনা, নকশা ইত্যাদি সব কাজে নিপুণ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। আফসোস, সেই সময়টায় তাঁকে আমরা যথাযথ সহযোগিতা করতে পারিনি। নইলে হয়তো আরও ভালো কিছু কাজ বেরোতে পারতো।
অভিনয় ও নির্দেশনায় সেরা ছিলেন মামুনভাই। তাঁর একনিষ্ঠ আত্মনিবেদন দেখে আমরাও নিজেদের সেরা কাজটা বের করে আনতে সচেষ্ট থাকতাম। তিনি ঢাকার একটা থিয়েটার গ্রুপে কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। সেটা আমাদের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা ছিল। মাসুমভাইয়ের আওয়াজটা ছিল ভরাট। জনিভাই ছবি তুলতেন ভালো। রাজীব-মামুন-মাসুম-জনি সমসাময়িক। পড়াশোনায় মনোযোগ কম দেখা গেলেও তাঁদের জ্ঞানের ভাণ্ডার ছিল বিচিত্র সব বিষয়ে সমৃদ্ধ। রাত-বিরাতে ঘুরে বেড়াতেন, গল্প যেন শেষই হতো না। তাঁদের মুখস্ত ছিল তখনকার ক্যাম্পাসের সুন্দরী বালিকা ও শিক্ষিকাদের যাবতীয় পরিসংখ্যান। দোলনভাই-সৈকতভাইও সম্ভবত একই ব্যাচে ছিলেন। কিন্তু তাঁদের নিয়ে স্মৃতি কম।
সিনিয়র ছিলেন অরূপদা, কিন্তু আমরা তাঁকে সবসময় সেই মর্যাদা দিতে কার্পণ্য করতাম। হাসি-ঠাট্টা করতাম অনেক। কিন্তু তিনি ছিলেন সত্যিকারের গুণী মানুষ। ছবি আঁকতেন, গীটার বাজাতেন, গ্রাফিক্স ডিজাইন করতেন। এরপর আমাদের ব্যাচ: তন্ময় সরকার কঠোর পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল। ভালো আড্ডাবাজ। তবে তাঁকে পাওয়া যেত কম। ব্যস্ততার তার অন্ত ছিল না। বিশাল বপু নিয়ে ফ্লোরে ও মঞ্চে দাপুটে উপস্থিতি আর দরাজ কণ্ঠ সহযোগে তার অভিনয় দেখে আমরা মুগ্ধ হতাম। পলাশ চক্রবর্তী তুখোড় অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী। গোলাম রসুল পাবেল ভালো সংগঠক ছিল, অভিনয়ে তার মনোযোগ ও সামগ্রিক প্রচেষ্টা দেখেছি সবসময়। মুজিব ছিল শুধুই সংগঠক, অভিনয়ে কোনো আগ্রহ তার ছিল না।
তারপরে এলো জাহিদ ও সাবরিনা এবং তারেক। জাহিদ অভিনেতা ও সংগঠক দুই ভূমিকায়ই অসাধারণ, এই দুই গুণের এমন সমন্বয় খুব কমই পাওয়া যেত। আর সাবরিনার গুণের কোনো শেষ নেই। সে ভালো গান করে। শিমু আপু সিলেট ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে যে শূন্যতা তৈরি হয়, সাবরিনা সেটা সার্থকভাবে পূরণ করে। অভিনয়ে নিবেদিতপ্রাণ, অন্য যেকোনো দায়িত্বেও। সাবরিনার শূন্যস্থান পরবর্তী সময়ে দিকে আর কোনো অভিনেত্রী পূরণ করতে পেরেছে কিনা আমার জানা নেই। তারেক খুব কৌতুকবাজ ছিল। অভিনয় ও সাংগঠনিক কাজে দক্ষ, তার সঙ্গ আমাদের খুব আনন্দ দিত। এ সময় ফয়েজ, আলমগীর, মন্টি দিদি—ওরাও সক্রিয় যদিও কিছুটা অনিয়মিত। সমসাময়িক এত সব গুণী শিল্পীর ভিড়ে আমার তেমন কিছুই করার থাকতো না। তবু হাজির থাকতাম, শ্রোতা হিসেবে ভালো ছিলাম যেকোনো আড্ডায়। মিশে যেতে পারতাম অনেকটা আলুর মতোন। সব তরকারিতে দেওয়া যায়, তবে দিলেও চলে, না দিলেও স্বাদের তেমন হেরফের হয় না! এমন নির্গুণ হওয়া সত্ত্বেও সংগঠনের প্রায় সবাই আমাকে খুব ভালোবাসত। মঞ্চেও মাঝে মধ্যে জায়গা পেয়ে যেতাম। সংগঠক হিসেবে আমার অনেক ঘাটতি ছিল। তারপরও প্রাপ্তি অনেক, সুখস্মৃতিও। প্রকাশনার কাজগুলো আনন্দ নিয়েই করতাম। সেই অভিজ্ঞতা পরে অনেক কাজে লেগেছে।
ক্যাম্পাসে আমাদের সময় নিয়ে লেখার মতো আরও অনেক বিবরণ, অনেক ঘটনা আছে। প্রতিটি প্রযোজনা প্রতিটি প্রদর্শনী নিয়ে কত স্মৃতি! পরবর্তীতে মাসুদ, সাগর, মৃদুল, মাহমুদা, রিফাত, রাজীব, মানিক, তনু, মৌ, মাহমুদ, নয়ন….ওরা এবং আরও অনেকে এসেছে। ওদের কাজ সরাসরি দেখবার সৌভাগ্য আমার খুব কম হয়েছে। সেসবের মূল্যায়ন ও বিবরণ অন্য কেউ তুলে ধরবে নিশ্চয়ই। এখানে কারও নাম ও ভূমিকা বাদ পড়লে সেটা নিতান্তই অনিচ্ছাকৃত।তারপরও আমি দুঃখপ্রকাশ করি। নির্মোহ বিবরণ দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, তবে এটা যে নির্ভুল ও চূড়ান্ত—তা নয়। তারপরও আমার কোনো মন্তব্যে কেউ আহত হয়ে থাকলে দুঃখিত।
স্মৃতির বাক্স খুলে বসলে ফুলের সুবাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে অজস্র দৃশ্য। দেখতে পাই কত ছবি, শুনতে পাই কত গান। ধুলো আস্তরণ পড়লেও পুরোপুরি মুছে যায়নি। মাঝখানে অনেকগুলো বছর ভীষণ ব্যস্ততায় কেটেছে। ক্যারিয়ার গড়ার অবিরাম প্রয়াস, পিছন ফিরে দেখার অবকাশ খুব কমই মিলত। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো নিয়ে ভাবতে গেলেও মনে হতো সেসব বুঝি অন্য কোনো জীবনের গল্প, অন্য কারও… আমার নয়। এখন এই দূর পরবাসে কোনো অবকাশে স্মৃতিচারণা মন্দ লাগে না।
দিকের সঙ্গে বহু স্মৃতি আছে। কত কত নাটক হয়েছিল: কবর, মহারাজের ঘুম নেই, শেকল, সুবচন নির্বাসনে, বিহঙ্গ, সালিশ, মহাপ্রলয়, কুরসি, হত্যার শিল্পকলা, ক্রীতদাসের হাসি, নীল ময়ূরের যৌবন, বিসর্জন। আরও দুয়েকটা নাম ভুলে গেছি। আমাদের সময়কার (২০০৫-২০১১) বেশির ভাগ প্রদর্শনীর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিলাম। তখন দিকের আয়োজনের তুলনায় কলাকুশলী কম ছিল। সেই সুবাদে এই অধমও কয়েকটা নাটকে মঞ্চে উঠবার সুযোগ পেয়ে যায় এবং অভিনয়ের কসরত করে। এ সবই এই ক্ষুদ্র জীবনের বড় ঘটনা হিসেবে স্মৃতির বাক্সে সযতনে জমিয়ে রেখেছি।
প্রথমদিকে দিকে যাঁদের সান্নিধ্য পেয়েছি, অনেকেই দূরে চলে গেছেন। বিবিসাব নাটকে সোহেলভাই, সৈকতভাই, রাজীবভাই, মহসিনভাই, শিমু আপু, ফাহিমভাই, মামুনভাই অভিনয় করেছিলেন। তখন জিয়াভাই, মাসুমভাই, সেবু আপু, জনিভাই, ইমনভাই, অরূপদাও ছিলেন। তারপর আমরা বেশ কয়েকজন সমসাময়িক যোগ দিই—তন্ময়, পলাশ, পাবেল, লাকু, জাহিদ, সাবরিন, তারিকুল, মন্টি দিদি, ফয়েজ, আলমগীর…আরও অনেকে পরবর্তীতে এসেছে, সেটা লম্বা তালিকা। ভুলবশত এখানে কারও নাম বাদ পড়লে দুঃখিত।
নাটকের মহড়াতে বিস্তর আনন্দ হতো। সাংগঠনিক কাজকর্মের বাইরেও আমাদের অনেক আড্ডার স্মৃতি আছে। সেসবই বেশি মনে পড়ে এখন। ছুটির দিনেও আমরা ক্যাম্পাসে গিয়ে জটলা করতাম। কখনো মদিনা মার্কেটে, চায়ের দোকানে, কখনো বা মেসে। আমরা অনেকে একই মেসে থাকতাম, সুতরাং দিন-রাতের কোনো বাধা ছিল না।
পল্লবী রোডের মেসের ছাদে গভীর রাত অবধি আমাদের আড্ডা হতো। সেখানে রাজীবভাই ও মামুনভাই আকাশের পানে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আধ্যাত্মিক বয়ান দিতেন। সেই আসরের আলোচনায় ঈশ্বর-পৃথিবী-ভালোবাসা কিছুই বাদ যেত না। তন্ময় শোনাতো বাস্তব জীবনের লড়াকু গল্প, পলাশ উদাত্ত গলায় গান ধরতো, জাহিদ মজার মজার গল্প বলতো আর হরিপদ মাঝে মধ্যে নৃত্য করতো। অরূপদা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাসের জন্য এসব আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতেন। আমাকে নিয়েও অনেক ঠাট্টা ও মজা করতো সেই সব আসরে, চুপচাপ শুনতাম। মন্দ লাগতো না। আসর জমানোর মতো গুণ আমার ছিল না। তবু কখনো বেশি চাপে পড়ে দুয়েকটা মুখস্ত কবিতা শুনিয়ে দিয়ে রেহাই পেতাম। এসব বিরামহীন কর্মকাণ্ডের মধ্যেও আমরা যে কীভাবে পরীক্ষা দিতাম আর পাসও করে যেতাম—সে এক বিস্ময়।